পঞ্চম পরিচ্ছেদ মৎস্য সংরক্ষণ আইন

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - কৃষি শিক্ষা - কৃষি উপকরণ | | NCTB BOOK
3

মৎস্য সংরক্ষণ আইন

দিনে দিনে আমাদের দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে এবং সেই সাথে বাড়ছে মাছের চাহিদাও। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে জেলেরা দেশের বিভিন্ন জলাশয় হতে প্রায় ছোট বড় সব মাছই ধরছে। এ থেকে রেহাই পাচ্ছে না পোনা মাছ ও প্রজননক্ষম মাছও। ফলে প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে ক্রমান্বয়ে মাছ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এমনকি কিছু প্রজাতি হারিয়ে যেতে বসেছে। মাছের উৎপাদন ও জীব বৈচিত্র্য যেন কমে না যায় বরং বৃদ্ধি পায় বা একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থাকে এজন্য সরকার মাছের আকার, প্রজনন ও বৃদ্ধির সময়, বিচরণক্ষেত্র ইত্যাদি বিষয়ে কতিপয় বিধি-নিষেধ আরোপ করে ১৯৫০ সালে “মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন- ১৯৫০” প্রণয়ন করে। এটি সাধারণভাবে 'মৎস্য সংরক্ষণ আইন' নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে বাস্তব প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে আইনটি সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন করা হয় । এই আইনের উল্লেখযোগ্য বিধিসমূহ হলো-

১। চাষের উদ্দেশ্য ব্যতীত কোনো ব্যক্তি কর্তৃক প্রতি বছর : ক) জুলাই হতে ডিসেম্বর (আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি হতে পৌষ মাসের মাঝামাঝি) মাস পর্যন্ত ২৩ সেন্টিমিটারের (৯ ইঞ্চি) নিচের কাতলা, রুই, মৃগেল, কালবাউস, ঘনিয়া; খ) নভেম্বর হতে মে (কার্তিক মাসের মাঝামাঝি হতে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি) মাস পর্যন্ত ২৩ সেন্টিমিটারের (৯ ইঞ্চি) নিচের ইলিশ (যা “জাটকা” নামে পরিচিত); গ) নভেম্বর হতে এপ্রিল (কার্তিক মাসের মাঝামাঝি হতে বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি) মাস পর্যন্ত ২৩ সেন্টিমিটারের ( ৯ ইঞ্চি) নিচের পাঙ্গাশ; ঘ) ফেব্রুয়ারি হতে জুন ( মাঘ মাসের মাঝামাঝি হতে আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি) মাস পর্যন্ত ৩০ সেন্টিমিটার থেকে (১২ ইঞ্চি) ছোট আকারের সিলন, বোয়াল ও আইড় মাছ ধরা, নিজের দখলে রাখা,পরিবহন বা বিক্রি করা নিষিদ্ধ ।

২। চাষের উদ্দেশ্য ব্যতীত সাধারণভাবে নদী-নালা, খাল-বিলে সংযোগ আছে এরূপ জলাশয়ে প্রতি বছর ১লা এপ্রিল থেকে ৩১শে আগস্ট (চৈত্র মাসের মাঝামাঝি হতে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি) পর্যন্ত শোল, গজার, টাকি মাছের পোনার ঝাঁক বা মা মাছ ধরা ও ধ্বংস করা যাবে না ।

৩। জলসেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা নর্দমার উদ্দেশ্য ব্যতীত নদী-নালা, খাল এবং বিলে অস্থায়ী বা স্থায়ী বাঁধ বা কোনোরূপ অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না ।

৪। নদী-নালা, খাল-বিলে স্থায়ী স্থাপনার মাধ্যমে (ফিক্সড ইঞ্জিন) মৎস্য আহরণ করা যাবে না, এরূপ ক্ষেত্রে স্থায়ী স্থাপনা অপসারণ এবং বাজেয়াপ্ত করা যাবে ।

৫। অভ্যন্তরীণ জলাভূমিতে বিষ প্রয়োগ, পরিবেশ দূষণ, বাণিজ্যিক বর্জ্য বা অন্যবিধ উপায়ে মাছ ধ্বংসের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না ।

৬। মাছ ধরার ক্ষেত্রে ৪.৫ সেন্টিমিটার বা তদপেক্ষা কম ব্যাস বা দৈর্ঘ্যের ফাঁস বিশিষ্ট ফাঁসজাল (প্রচলিত নাম-কারেন্ট জাল) ব্যবহার নিষিদ্ধ ।

৭। ইলিশ অভয়াশ্রম সংরক্ষণ: সরকার ঘোষিত ইলিশ অভয়াশ্রম এলাকায় বছরের নির্ধারিত সময়গুলোতে কোনো ব্যক্তি কোনো মাছ ধরতে বা ধরার কারণ সৃষ্টি করতে পারবে না ।

৮। ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ: ইলিশ মাছের অবাধ প্রজননের সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রজনন ক্ষেত্রগুলোতে প্রতি বছর ১৫-২৪শে অক্টোবর (১-১০ই আশ্বিন) ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ।

৯ । শাস্তি:

(ক) প্রথমবার আইন ভঙ্গকারীর শাস্তি হবে কমপক্ষে ১ মাস হতে সর্বোচ্চ ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তৎসহ সর্বোচ্চ ১০০০/- টাকা জরিমানা।

(খ) পরবর্তীকালে প্রতিবার আইন ভঙ্গের জন্য কমপক্ষে ২ মাস হতে সর্বোচ্চ ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং তৎসহ সর্বোচ্চ ২০০০/- টাকা জরিমানা ।

নতুন শব্দ : জাটকা, কারেন্ট জাল

Content added By
Promotion